মাধবদীর পূর্ব দিকের চরদিঘলদী গ্রামের আব্দুল হামিদ মাষ্টারের নাম এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে হয়। অল্প শিক্ষিত এই হামিদ মাষ্টার ছিলেন সারিগান, জারিগান, পুঁথিকাব্য রচনায় সিদ্ধহস্ত । তিনি " সোনার কমল হীরামন কন্যা " নামে একটা পুঁথিগ্রন্থ রচনা করে ছিলেন। নরসিংদী দক্ষিনাঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামে এই পুঁথি মঞ্চায়নও হয়েছিল।
দোতারা গান, বাউল গান, ফকিরি গান এই সব নামে যে মরমী সংগীত আবহমান কাল থেকে চলে এসেছে তার আবেদন শজেই শিক্ষিত, অশিক্ষিত নির্বিশেষে সকলকে আকষ্ট করতো।
নরসিংদীর দ্দ্বিজদাস এই মরমী ও আধ্যাত্বিক সংগীত রচনা করে অমর হয়ে রয়েছেন। ১২৫২ বঙ্গাব্দে পলাশ থনার পারুলীয়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। তখন পারুলীয়া ছিল মহেশ্বরদী পরগনার অন্তগ্ররত। ১৩৪২ বঙ্গাব্দে তিনি পরলোকগমন করেন। পাগল কবিরাজ দ্বিজদাসের নাম আজ কারোর অজানা নয়। তার অসংখ্য গান এখনো গাওয়া হয়। বাউল শিল্পীরা এই দ্বিজদাসের নাম শুনে ভক্তি করে। তিনি অসংখ্য গান লিখেছেন। তখনকার আথ্র সামাজিক প্রেক্ষাপটে কোন পালাগান, বৈশাখী গান মানেই দ্বিজদাসের গান। তখন কার যুগে যে কয়জন কৃষ্ণ ভজন চৈতন্য গীতি ও বৈষ্ণব গান রচনা করতেন অথবা গাইতেন তাদের মধ্যে ক্ষীরোদ চন্দ্র ও মনিন্দ্র যে অন্যতম তা উল্লেখিত গান থেকে বুঝা যায়। কৃষ্ণ সাধু নূরালাপুর আশ্রমে ভক্তদের নিয়ে আসর বসাতেন। সরু চাল, মুগ ডালের খিঁচুরী, ডালনা পায়েস বিতরণ করতেন ভক্তদের মাঝে আর গান গাইতেন । " সাধুর বাজারে যাইও, মহা প্রসাদ কিনে লইও সেই প্রসাদ পথে পথে খাইও ।" এছাড়া অন্ধ ভিক্ষুকরা একতারা বাজিয়ে গান গাইত মাধবদীর বুকে। "মা যে আমার পাগল বেটি সে কি পরে গয়না গাটি (ও যে) রক্ত জবায় ডেকে রাখে রাজ্ঞা রাজ্ঞা চরণ দুটি। " অথবা কেউ নদীর কিনারে শশ্নান ঘাটে ন্সে গান গাইত গ্লা ছেরে -- " আমার কর্ম দোষে, নিতাইর সরল দেশে যাওয়া হয় মিছে। ভক্তি পথে দিয়ে বেড়া, উল্টা পথে চলছে তারা- দিবা রাত্র চলছে তারা, দন্ডকাল নাই বিরামখানা । নিতাইর প্রেমের বাঁধী, নিতাইর নামে বাঁধী- ঘাটে পথে অনেক আছেরে মন । থাকবে এমবি চাতক হয়ে, নিতাইর চরণ নিরখিয়ে । মানুষ পূর্ব রাগে, সাধুর সজ্ঞ করলে জন্ম মৃত্যু বাঁচে । " মাধবদী একটি প্রচীন নাম । সুদূর অতিত থেকে এ নামটি চলে আসছে। মাধবদী ব্রক্ষপুত্র নদের তীরে অবস্থিত। এই ব্রক্ষপুত্র নদটি কিশোরগঞ্জ জেলা হয়ে মনোহরদীর উপর দিয়ে এসে হাড়ি ধোয়া নদীতে মিশে তারপর এই নদ পলাশ উপজেলার জিনারদীর অদূর থেকে শিলমান্দী হয়ে মাধবদীর উপর দিয়ে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে মেঘনা নদিতে গিয়ে মিশে যায়। এই খরস্রোতা নদকে কেন্দ্র করেই প্রাচীন মাধবদীর জন্ম। যার বুকে এককালে উত্তাল ঢেউ ছিল, বিরাটকার গয়না নৌকা পাল তোলে এসে নোঙর ফেলতও মাধবদীর বুকে।
বিভিন্ন ঐতিহাসিকদের তত্ত্ব থেকে জানা যায় প্রাচীন কালে পানি বেষ্টিত কোন নিদিষ্ট এলাকাকে "দী" "চর" এইসব নামে চিন্থিত করা হতো। "দী" যোগে আরো কতগুলো এলাকা আছে মাধবদীর পাশে। যেমন- আনন্দী, সাগরদী, রহিমদী, শীলমান্দী, আবার চর বালাপুর, চরপাড়া, পাইকারচর, চরভাসানীয়া ইত্যাদি। সে হিসেবে মাধবদী যে সেকালে একটি জলবিধৌত দ্বীপাঞ্চল ছিল তা নামকরণ থেকেই প্রতীয়মান। রাজধানী ঢাকার পূর্ব দিকে ৪০ কিলোমিটার , জেলা সদর নরসিংদীর দক্ষিণ দিকে ১২ কিলোমিটার, ঢাকা সিলেট হাইওয়েয় পাশে এবং মেঘনা স্রোতস্বীনির ৪ কিলোমিটার এর মধ্যেই এই জনপদের অবস্থান। মাধবদীর নাম করনের ক্ষেত্রে আমরা যদি প্রচিলত সূত্র অবলম্বন করি যেমন জলবেষ্টিত দ্বীপ অঞ্চলের সাথে দী যোগে মাধবদী হতে পারে,
কেননা মাধবদীর পাশ্ববতী এলাকাগুলো যেমন আন্দদী, রাইনাদী, রহিমদী, সাগরদী, শীলমান্দী প্রভৃতি এলাকার নামের সাথে দী যুক্ত হয়ে নামকরণ করা হয়েছে। কিন্তু এই অঞ্চলের তখন কার জমিদারদের পূর্ব পুরুষ মাধবচন্দ্র গুপ্ত রায় নামে একজনকে পাওয়া যায়। ধারনা করা হচ্ছে মাধব চন্দ্র গুপ্ত রায়ের মাধবের সাথে দী যুক্ত হয়ে মাধবদী নামকরণ হয়েছে। এই যুক্তিটাই সব্রাধিক গ্রহণযোগ্য। মাধব বাবুর নাম থেকে মাধবদী নামের সৃষ্টি। ২৫ মার্চ মধ্য রাত্র । সকলে তখন ঘুমের ঘোরে বিভোর। হঠাৎ করে ইয়াহইয়া খানের সেনা পশুরা ঝাঁপিয়ে পড়ল ঘুমান্ত ইপি আর জওয়ান ও পুলিশ বাহিনীর উপর । ব্রাশ ফায়ারে ঝাঝ্রা করে দিল রাজার বাগ পুলিশ লাইন ও ই পি আর পিলখনা ক্যাম্প। নারী পুরুষ শিশু নির্বিশেষে অসংখ্য আদম সন্তান নিহত ও আহত হল। এদিকে জারি করা হল সামরিক শাসন। ঢাকার মানুষ সারারাত্র গুলিগোলার শব্দে ঘুমাতে পারেনি। সকলে প্রাণভয়ে অস্থির। ক্ষন জানি পাক হানাদার বাহিনি এসে তাদের উপর জাপিয়ে পড়ে। ভোর হতে না হতেই আক্ষরিক অর্থেই ঢাকার সকল লোক ধনি, গরীব, চাকুরী জীবী, ব্যবসায়ী , নারী পুরুষ, শিশু বৃদ্ধ দলে দলে ঢাকা ছেরে চলে যায় গ্রামে। মাধবদী অঞ্চলেও এর ঢেউ লাগে এবং ভালভাবে লাগে। এলাকার দিশাহারা মানুষ কি করবে ভেবে পায় না। একেবারেই হতাশ হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে কালুর ঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা আমি মেজর জিয়া বলছি এই কথাটা মানুষের ম্নে দারুন সাহস এনে দেয়। তারা ভাবতে থাকে আমরা অসহায় নই। মিলিটারি আমাদের সহায়তায় আছেন। বাঙ্গালি মিলিটারি, রয়েল বেঙ্গল টাইগার। যার নাম শুনলেই পশ্চিমারা ভ্যে কম্পমান ।.................................
আজ আর নয়.........আসা করি আরও একদিন লেখা হবে......সেই পর্যন্ত bay আমার জন্য সবাই দোয়া ক্রবেন....আর ভুল হলে ক্ষমা করবেন.....আল্লা-হাফেচ ১৮ শতকের শেষ পর্যায় বর্তমান মাধবদী বাবুর হাটের পাশ্ববতী উত্তর দিকে আনন্দী গ্রামে কাজির হাট নামে একটি হাট বসতো বিকাল থেকে রাত্র পযন্ত । এই হাটে তখন কার দিনের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদী কেনা বেচা হত। এই হাট কখন , কবে,কিভাবে, বিলুপ্ত হয় তা জানা যায়নি। তবে ১৯ শতকের প্রথম দিকে মাধবদীতে স্থানীয় জমিদারের পৃষ্টপোষকতায় বলতে গেলে তাদের বাড়ীর আজ্ঞিনায় প্রতি সোমবার দিন হাট জমতে শুরু করে। মাধবদী এবং আশপাশের কয়েকটি গ্রাম, যেমন- আলগী, বিরামপুর,আনন্দী ইত্যাদিতে এক শ্রেণীর লোকের গর্ত তাঁতের মাধ্যমে কাপড় উৎপাদন করতো এবং মাধবদীর সাপ্তাহিক হাটে উৎপাদিত কাপড় বিক্রির জন্য নিয়ে আসতো। এই এলাকা এবং এই হাটের কাপড়ের সুখ্যাতি ক্রমান্বয়ে সারা ভারত উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। স্বদেশী আন্দোলনের সময় মহাত্নাগান্ধীর ঘোষণা অনুযায়ী এলাকায় স্বদেশী আন্দোলন কর্মীদের তাগিদে যখন বিদেশী বস্ত্র বর্জন শুরু হয় তখন যোগীদের পাশাপাশি অত্রাঞ্চলের সর্বস্তরের মানুষ কাপড় বুনন কাজে উৎসাহী হয়ে পড়ে। এই সময় এলাকার কিছু সজ্জন ব্যক্তি নিজস্ব প্রচেষ্টায় ও প্রযুক্তির মাধ্যমে জাপানী কলের প্রচলন শুরু করে। তারপর থেকেই বস্ত্র উৎপাদনে ব্যাপক গতিশীলতা আসে, ফলে বাবুর হাটে প্রচুর প্রিমান কাপড় আমদানী ও রপ্তানী শুরু হয়। মারোয়াড়ী ব্যবসায়ীরা পশ্চিম বঙ্গ, বিহার, উড়িষ্যা, আসাম ইত্যাদি অঞ্চলে কাপড় চালান দিতে থাকে। তারা এখন থেকে কাপড় ক্রয় কড়ে সারা বিশ্বে মাধবদীর কাপড়ের পরিচিতি ও সুখ্যাতি তুলে ধরে। যার ফলে মাধবদী বাবুর হাট তখন থেকেই প্রাচ্যের ম্যানচেষ্টার হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
Start blogging by creating a new post. You can edit or delete me by clicking under the comments. You can also customize your sidebar by dragging in elements from the top bar.
|
Authorআমার জন্ম মাধবদী । আমি মাধবদীর মত শহরে জন্মতে পেরে গর্বিত । ArchivesCategories |